কুমির চাষ
আসসালামুয়ালাইকুম, আশা করি সবাই ভাল আছেন। আমিও ভাল আছি।আজ কুমির চাষ নিয়ে আলচনা করবো ।শুরুতেই বাংলাদেশ কৃষিভিত্তিক দেশ। শস্য চাষের সাথে পশু পালন দিন দিন আবশ্যিক হয়ে উঠছে। দেশে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী লালন করা হয়। আর এরই অংশ হিসেবে প্রাণীজগতের অন্যতম নাম কুমির চাষ দেশে এখন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এতদিন গার্মেন্টস শিল্প একচেটিয়া দখল করে ছিলো, এরপরে বিভিন্ন শিল্প ও কৃষিজ পণ্য, মৎস্যজাত ও ওষুধি দ্রব্য। কিন্তু এ ধারাবাহিকতার তালিকায় শ্রীঘ্রই ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসবে বাংলাদেশ ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কুমির চাষ। মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই কয়েকগুণ মুনাফা আয় সম্ভব। ময়মনসিংহের ভালুকায় অবস্থিত “রেপটাইলস ফার্ম লি.” এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কয়েক বছর পরেই এ ছোট খামার থেকে বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকার চামড়া বিদেশে রপ্তানি সম্ভব। ময়মনসিংহের মত কুমিরের এ রকম আরেকটি ফার্ম হচ্ছে আকিজ গ্রুপের আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড।নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে, ঘুমধুম ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা তুমব্রু গ্রামে এটি অবস্থিত। গ্রামটি মিয়ানমার সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি। যেখানে কুমির দেখার পাশাপাশি পাহাড়চূড়া থেকে মিয়ানমারও দেখা যায়। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের উখিয়া টিভি রিলে কেন্দ্রের সামনে দিয়ে গহিন অরণ্যের দিকে চলে যাওয়া আঁকাবাঁকা পথে গেলে কুমিরের এই বিচরণক্ষেত্র পরিদর্শন করা যায়। ৩০ একরের বেশি পাহাড় ঘিরে কুমিরের এই প্রজননকেন্দ্রটি স্থাপন করেছে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপের আকিজ ওয়াইল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড। ২০০৯ সালের মার্চে কুমির চাষের জন্য পাহাড়ের বিশাল অংশজুড়ে নির্মাণ করা হয় অবকাঠামো এবং বর্তমানে এর কার্যক্রম চলছে। ব্যবসায়িকভাবে দেশে আগমন ময়মনসিংহ শহরের অদূরে অবস্থিত ভালুকা একটি ছোট শহর। এর তীর ঘেঁষে মাত্র ১৫ একর জমির উপর গড়ে উঠেছে “রেপটাইলস ফার্ম লি.”। ২০০৪ সালে ডিসেম্বর মাসে মালয়েশিয়া থেকে ৭৫টি বয়স্ক কুমির নিয়ে মোস্তাক আহমেদ ও মেজবাউল হকের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় এই কুমির ফার্মের অগ্রযাত্রা শুরু হয়। এর মধ্যে ৭টি কুমির কিছু দিনের মধ্যে মারা যায় এবং বেঁচে থাকে ৬৯টি কুমির । এগুলোর মধ্যে ১৩টি পুরুষ ও ৫৪টি স্ত্রী কুমির। ২০০৪ সালে প্রথম প্রথম ৩টি বাচ্চা পাওয়া যায়। ২০০৭ সালে বাচ্চার সংখ্যা দাঁড়ায় ৪১টি। বর্তমানে এই সংখ্যা ১৩৯টি। তবে এ বছর ৪০০ বাচ্চা আশা করা হচ্ছে। খাবার পদ্ধতি বাচ্চাগুলো খুবই অনুভূতি প্রবণ, বদরাগী এবং অভিমানী। তাই মাত্র একজন ব্যক্তিকেই প্রতিদিন খাবার দিতে হয়। হঠাৎ ব্যক্তির পরিবর্তন হলে বাচ্চাগুলো খাবার খাওয়া বন্ধ করে দিবে এবং অনাহারে মারা যাবে। ছোট বাচ্চদের প্রতিদিন তাদের শরীরের ২০ ভাগ খাবর দিতে হয়। মুরগির মাংসকে কিমা করে বাচ্চাদের খাওযাতে হয়। বড় কুমিরদের সপ্তাহে একদিন ওজনের শতকরা ২০ ভাগ খাবার দিতে হয়। মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে মুরগির মাংস, তৃতীয় সপ্তাহে গরুর মাংস এবং শেষ সপ্তাহে মাছ খাবার হিসেবে দিতে হয়। চাষ পদ্ধতি প্রাথমিক খরচ কিছুটা বেশি হলেও সম্পূর্ণ নিরাপদে ও নিশ্চিন্ত পরিবেশে কুমির চাষ বাংলাদেশের আবহাওয়ার উপযোগী। কুমির চাষের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রজনন সময়ে কুমিরের প্রতি অধিক যত্মবান হওয়া যেন পুরুষ কুমিরের সাথে স্ত্রী কুমিরের প্রতিযোগিতা না হয়। একটি কুমির সর্বাধিক ৮০টি ডিম দেয় এবং বেশিরভাগ ডিম পাড়ে ঘাসে ও কাদাযুক্ত মাটিতে। ডিম ফুটার সাথে সাথেই তা সংগ্রহ করে ইনকিউবেটরে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হয়। তবে এক্ষেত্রে আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পুরুষ কুমিরের উৎপাদন চামড়ার কদর বেশি তাই এক্ষেত্রে তাপমাত্রা বেশি দিয়ে পুরুষ কুমিরের চামড়ার কদর বেশি তাই এক্ষেত্রে তাপমাত্রা বেশি দিয়ে পুরুষ কুমিরের উৎপাদন বাড়ানো যায়। বাচ্চা কিছুদিন খুব যত্ম সহকারে ছোট পুকুরে রাখতে হবে। এ সময় খাবারের প্রতি ও ছত্রাক রোগের প্রতি যত্মশীল হতে হবে। কয়েক মাস বয়সের বাচ্চাদের পৃথক পৃথক পুকুরে স্থানান্তর করে নিয়মিত পরিচর্যা করলেই দুই বছরেই চামড়া সংগ্রহ করা যায়। প্রজনন সময় কুমির সাধারণত বর্ষাকালে প্রজননে মিলিত হয় এবং এর এক সপ্তাহের মধ্যে ডিম দেয়। একটি কুমির ২০-৮০ টি ডিম দেয়। তবে, ভালুকায় এখন পর্যন্ত গড় ডিম দেয়ার পরিমাণ ৬১ টি যা এ বছর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েচে ৯৪৪টি। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সময় লাগে ৮০ দিন। নিয়ন্ত্রিত আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা সম্পূর্ণভাবে থাকলে শতকরা ৮৫ ভাগ বাচ্চা বের হতে সময় বেশি লাগে। মজার বিষয় হলো, তাপমাত্রায় পার্থক্যের কারণে বাচ্চা পুরুষ বা স্ত্রী হতে পারে। তাপমাত্রা ৩১-৩২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হলে পুরুষ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী এর কম হলে স্ত্রী বাচ্চা বেশি পাওয়া যায়। কুমিরের জনগণের নাগালের বাইরে রাখতে হয়। রোগ-বালাই কুমিরের সাধারণত রোগবালাই হয় না বললেই চলে। ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা ভালো থাকলে সারা বছর বিনা চিকিৎসায় কুমিরকে সুস্থ রাখা সম্ভব। ছোট কুমিরের ছত্রাক জাতীয় রোগ বেশি হয়। তবে, এই দীর্ঘ ৫ বছরে এ ফার্মে এ ধরনের কোন রোগ দেখা যায়নি। প্রজনন মৌসুমে ও খাবার প্রতিযোগিতার সময় কুমির আহত হতে পারে। এছাড়াও খেয়াল রাখতে হবে যে, মানসিক ও শারীরিকভাবে ছাড়াও স্থানান্তর ও পরিবহনের সময় যাতে কুমিরের উপর কোন স্ট্রেস না পড়ে। ব্যবসায়িক লাভ ১) ২০০৯ সালে কুমিরের চামড়া প্রথম বাংলাদেশ হতে রপ্তানি হয়। প্রথমদিকে রপ্তানির পরিমাণ কম হলেও ২০১২ সন নাগাদ এর পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১২ কোটি টাকা। ২) বহির্বিশ্বে ২৫ ডলারে কুমিরের মাংস বিক্রি হয়। ৩) ১২ ডলার দামে বিক্রি হয় ১ বর্গ সে.মি চামড়া। ৪) কুমিরের চামড়া হতে বেল্ট ও লেডিস পার্টস তৈরি হয়। ৫) হাড় হতে পারফিউম তৈরি হয়। ৬) দাঁত হতে গহনা তৈরি হয়। ৭) পায়ের থাবা হতে চাবির রিং তৈরি হয়। ৮) কুমিরের মাংস বেশ সুস্বাদু ও পুষ্টিকর তাই দেশে ও বিদেশে চাহিদা প্রচুর। চাষের এলাকা বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গাই কুমির চাষের উপযোগী। তবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জন্য কিছু লবণাক্ততা সহনশীল প্রজাতির কুমির রয়েছে। উত্তরবঙ্গের জন্য স্বাদু পানির কিছু কুমির পাওয়া যায়। তবে এই ফার্মে স্বাদু পানির কুমির চাষ করা হয। বিশেষ সুবিধা অন্যান্য কয়েক সেক্টরের বিভিন্ন ভাইরাল রোগের চরম আতঙ্ক থাকলেও এই সেক্টরে তা একেবারেই নেই। তাই অপার সম্ভাবনার এই শিল্পকে বাংলাদেশে জোরদার করে এবং চামড়া প্রক্রিয়াজাত করলে পোলট্রি ও গার্মেন্টস সেক্টরের মতো এই সেক্টর হতেও ব্যবসায়িকভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। তবে সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য। উল্লেখ্য, এ ফার্মে যে ইনকিউবেটর ব্যবহার হয়, তা বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক। ব্যবস্থাপনা ও পরিচর্যা খুব নিখুঁত হওয়ায় এখন পর্যন্ত তেমন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেনি। শীঘ্রই রেপটাইলস ফার্ম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
কুমির চাষ ও রফতানিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহের ভালুকা সদর থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে ভরাডোবা-সাগরদিঘি সড়কের কাছে উপজেলার উথুরা ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামের রেপটাইল ফার্ম লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে কুমিরের চাষ শুরু করেছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের দরবারে কুমির চাষ ও কুমির রফতানিকারক দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের নাম যুক্ত হয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে গত ২০০৪ সালের ৫ মে খামারটি প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পাওয়ার পর খামারিরা আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইটিইএস’র অনুমোদন নিয়ে ওই বছরের ডিসেম্বর মাসে মালয়েশিয়ার সারওয়াত কোম্পানির কাছ থেকে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫টি পুরুষ এবং ৬০টি মাদী কুমির আমদানি করেন। পরে ২২ ডিসেম্বর কুমিরগুলোকে খামারে অবমুক্ত করা হয়। তখন আমদানি করা কুমিরগুলোর বয়স ছিল গড়ে ১০ থেকে ১৪ বছর, আর সেগুলো লম্বায় ছিল ৭ থেকে ১২ ফুট। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের আগস্ট মাসে ওই খামারের দুটি মাদী কুমির ডিম দেয়া শুরু করে। ক্রমান্বয়ে কুমিরের বংশবিস্তারের মাধ্যমে ওই খামারে কুমিরের সংখ্যা প্রায় আটশ’তে উন্নীত হয়। পরে সরকারের কাছ থেকে কুমির রফতানির চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে জার্মানির হাইডেল বার্গ ইউনিভার্সিটি কুমিরের শরীরের কিছু বিশেষ অংশ থেকে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক ওষুধ আবিষ্কারের জন্য বাংলাদেশের এই প্রতিষ্ঠান রেপটাইল ফার্ম লিমিটেডের সঙ্গে কুমির রফতানির চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। ২০১০ সালে খামারটির রফতানিযোগ্য তিনশ’ কুমিরের মধ্য থেকে ৬৭টি কুমির জার্মানিতে রফতানিও করা হয়। এছাড়া, আরো ২২৩টি কুমির ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। জার্মানিতে ৭০ লাখ টাকায় ৬৭টি কুমির বিক্রির মধ্য দিয়ে লাভের মুখ দেখে প্রতিষ্ঠানটি। একই সঙ্গে কুমির রফতানিকারক দেশ হিসেবে প্রথমবারের মত বাংলাদেশের নাম লিপিবদ্ধ হয়। কিন্তু এরপর দীর্ঘদিন এই ব্যবসায়ে টিকে থাকার জন্য বেশ লড়াই করতে হয়েছে কুমিরের খামারটির মালিকদের। কারণ প্রথমবারের পর আর কোন কুমির তার রফতানি করতে পারেননি। দিন দিন কুমিরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও কুমির বিশেষজ্ঞের অভাবে খামারটিতে বেশ কয়েকটি কুমির মারা গেলে ক্ষতির মুখে পড়েন খামারিরা। বর্তমানে খামারটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ রফতানিমুখী খামার হিসেবে গড়ে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন খামারিরা। প্রসঙ্গত, কুমিরের চামড়া থেকে বেল্ট, হাড় দিয়ে পারফিউম, দাঁত দিয়ে মুল্যবান অলংকার ও রক্ত দিয়ে ক্যান্সার রোগের প্রতিষেধক তৈরী হয়। তাছাড়া ফ্রান্স, জার্মান, ইতালি, চীন, স্পেন ও তাইওয়ানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুমিরের মাংসের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে। তাই কুমির রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার সম্ভব। কুমির রফতানির মাধ্যমে ব্যক্তিগত লাভ ছাড়াও আর্থিকভাবে লাভবান হবে দেশ। তাই সরকারি পৃষ্টপোষকতা ও রফতানী কাজে সহযোগিতার মাধ্যমে খামারিদের কুমির চাষে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন। এর ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কুমির চাষে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। রেপটাইল ফার্ম লিমিটেডের ব্যবস্থাপক ডা. আরিফ আহমেদ খামারের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলেন, “খামারটির মালিকপক্ষ বর্তমানে ব্যবসায়িক কাজে দেশের বাইরে রয়েছেন। এই সময়টা কুমিরের প্রজননের সময় হওয়ায় খামারের কুমিরগুলো এখন ডিম দিচ্ছে। খামারের মালিকপক্ষ দেশে আসার পর আগামী ডিসেম্বর মাসে এই খামার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রেসকে জানানো হবে।” দেশের বিভিন্ন স্থান হতে বর্তমানে দর্শনার্থীরা কুমিরের এই খামারটিতে আসেন কুমির দেখতে। প্রতি দর্শনার্থীর প্রবেশ ফি ২৫০ টাকা করে নেয়া হয়। খামারটিতে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট-বড় বিভিন্ন আকারের অসংখ্য কুমির পানি থেকে উঠে অলসভাবে রোদ পোহাচ্ছে। কুমিরগুলোর জন্য চার ফুট পাকা দেয়াল দিয়ে ঘেরা এবং ওপরে জি আই তারের নেটে আবৃত জায়গায় শতাধিক পুকুর রয়েছে। প্রত্যেক পুকুরে দু’তিনটি করে প্রাপ্তবয়স্ক বৃহদাকার পুরুষ ও মহিলা কুমির রয়েছে। আবার কিছু কিছু পুকুরে একসঙ্গে অসংখ্য ছোট ও মাঝারি সাইজের কুমির গাদাগাদি করছে। ফার্মের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আরেক কর্মকর্তা আবু হোসেন মোহাম্মদ আরিফ জানান, ২০০৪ সালে ১৫ একর জমিতে কিছুসংখ্যক বিশেষ প্রযুক্তির পুকুর খনন করে রেপটাইলস ফার্ম নামে এই প্রকল্পের জন্য মালয়েশিয়া থেকে বিশেষ বিমানে করে ৭৫টি কুমির আমদানি করা হয়। কুমিরের চামড়া ও মাংস রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাই ছিল এ ফার্ম করার উদ্দেশ্য। ভালুকার এই খামার থেকে কুমিরের চামড়া ও মাংস রফতানি করে কোটি কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার সম্ভাবনার কথাও জানান তিনি। চলতি বছর এই উদ্দেশ্য সফল হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি জানান, ৭৫টি কুমির থেকে পর্যায়ক্রমে বাচ্চা দিতে দিতে বর্তমানে ষোলশ’ কুমির হয়েছে। এর মধ্যে রফতানির জন্য আলাদা শেডের চৌবাচ্চায় পাঁচশ’ কুমির সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে খামারের আয়তন ১৫ একর থেকে ২৫ একরে উন্নীত হয়েছে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এই খামারটি সফলতার মুখ দেখছে। কুমিরের সার্বক্ষণিক পরিচর্যাকারী কেয়ারটেকার তোতা মিয়া জানান, তিনি শুরু থেকেই এই ফার্মে কর্মরত আছেন। বিদেশ থেকে আসা বিশেষজ্ঞরা তাকে কুমিরের প্রতিপালনের ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন। সাধারণত এ সময়টায় কুমিরকে খাবার দেয়া হয় না। গরম পড়লেই খাবার দেয়া শুরু হবে। এক সপ্তাহ পর পর বয়স অনুপাতে কুমিরগুলোকে পরিমাণ মতো খাবার দেয়া হয়। একসঙ্গে থাকা বাচ্চা কুমিরগুলোকে কয়েকদিনের মধ্যেই বিভিন্ন পুকুরে স্থানান্তর করা হবে। এদিকে, উখিয়া সীমান্তের ঘুমধুমে প্রতিষ্টিত এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমির চাষ প্রকল্পের উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে রফতানির কাজ এখনো শুরু হয়নি এই প্রকল্প থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা থেকে ৭০ কিলোমিটার ও উখিয়া উপজেলা সদর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দুরত্বে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের বালুখালী টেলিভিশন উপ-কেন্দ্র থেকে মাত্র আধা কিলোমিটার দুরত্বে ঘুমধুম পাহাড়ি এলাকায় ২৫ একর জায়গার উপর এই কুমির চাষ প্রকল্পটি গড়ে তুলেছে দেশের বৃহত্তর তামাকজাত ব্যবসা প্রতিষ্টান আকিজ গ্রুপের অপর একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্টান আকিজ ওয়ার্ল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেড স্বত্ত্বাধিকারী শেখ আজিজ উদ্দিন। প্রকল্পের ৩১টি মাদি কুমির ইতিমধ্যেই তিনশ’ বাচ্চা প্রসব করেছে। সেসব বাচ্চা সুস্থ অবস্থায় বড় হচ্ছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী চার বছরের মধ্যে এই প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদিত কুমির মালয়েশিয়ায় রফতানি করে হাজার কোটি টাকা আয় করার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। তারা আশা করছেন, কুমির চাষের পাশাপাশি এই প্রকল্পে প্রজাপতি চাষ, বার্ড পার্কসহ কটেজ ও মিউজিয়াম হাউজ গড়ে তুলে প্রকল্পটিকে একটি পর্যটন স্পট হিসেবেও গড়ে তোলা হবে। এতে দেশি-বিদেশী পর্যটকের আগমন ঘটলে সরকার পর্যটন খাতেও প্রচুর রাজস্ব আদায় করতে পারবে। সরজমিনে গতকাল রোববার কুমির চাষ প্রকল্প ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৯ সালে শুরু হওয়ার পর এই প্রকল্পটিতে ২০১০ সালের শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবে ৫০ কুমির উম্মুক্ত জলাশয়ে ছাড়া হয়। এর মধ্যে তিনটি কুমির পরে মারা গেলেও বর্তমানে বাকি ৪৭টি কুমির সুস্থ রয়েছে। কুমির চাষ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক আব্দুল আজিজ জানান, সপ্তাহে এসব কুমিরদের খাবার হিসাবে দুইশ’ কেজি মাছ-মাংস সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি বাচ্চা কুমিরদের জন্য মাছ–মাংশ কিমা বানিয়ে খাওয়াতে হয়। প্রতি মাসে এসব কুমিরদের জন্য খরচ হয় গড়ে দেড় লাখ টাকা করে। তিনি আরো জানান, এই প্রকল্পে থাকা ৩১টি মাদি কুমির সম্প্রতি তিনশ’ বাচ্চা প্রসব করেছে। এগুলোর মধ্যে বিভিন্ন কারণে ১১টি বাচ্চা মারা গেলেও ২৮৯টি বাচ্চা সুস্থ আছে। আগামী চার বছর পর এসব কুমির মালয়েশিয়ায় রফতানি করলে প্রায় হাজার কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। উল্লেখ্য, এই দুটো প্রকল্প ছাড়াও বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ ও রফতানির জন্য সুন্দরবনে সরকারি অর্থায়নে একটি কুমির চাষ প্রকল্প আছে। আর ময়মনসিংহ জেলার ভালুকার রেপটাইল ফার্ম লিমিটেড নামের ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি এরই মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে কুমির রফতানির কাজ শুরু করলেও আকিজ ওয়ার্ল্ড লাইফ ফার্ম লিমিটেডের এই প্রকল্পটি দেশের সর্ববৃহৎ ও এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম কুমির চাষ প্রকল্প। আব্দুল আজিজ আরো জানান, দেরিতে হলেও এই প্রকল্পের কুমিরগুলো প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেড়ে ওঠায় এই প্রকল্পে আর্থিকভাবে ক্ষতি হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। এই কুমির চাষ প্রকল্পটির পরিচর্যাকারী সুলতান আহমদ জানান, প্রকল্পে থাকা মাদী কুমিরগুলো একসঙ্গে গড়ে ৫০ থেকে ৫৫টি করে ডিম দেয়। এসব ডিম সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নজর রাখা হলে প্রতিটি ডিম থেকেই বাচ্চা ধারণ করা সম্ভব। ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দীপক বড়ুয়া বলেন, অবহেলিত একটি ইউনিয়নে কুমির চাষ প্রকল্পের মত একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় এলাকার অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি আকিজ গ্রুপের সহযোগিতায় এখানে একটি পর্যটন স্পট গড়ে তোলারও পরিকল্পনা রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে ঘুমধুম একটি বাণিজ্যিক নগরীতে পরিণত হবে।
ভালুকা থেকে কোটি টাকার কুমির রপ্তানি হচ্ছে জার্মানিতে
বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এই প্রথম এক কোটি টাকার কুমির রপ্তানি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে ৭০ থেকে ১০০টির মতো কুমির রপ্তানি করা হবে। এ রপ্তানির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রথম কুমির রপ্তানিকারক দেশের তালিকায় নাম লেখাচ্ছে। সরকার গত ১০ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মাঝে একমাত্র বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ করছে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকার রেপটাইলস ফার্ম লি. । ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় গ্রামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড ২০০৪ সালে এ খামারটি প্রতিষ্ঠা করে। শুরুতেই কুমিরের সংখ্যা ছিল ৭৫টি। পরে এসব কুমিরের ডিম থেকে কৃত্রিম উপায়ে বাচ্চা ফোটানো হয়। বর্তমানে এ খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে কুমির আছে ৮শ’টির বেশি। আগামী বছর আরও একশ’টি কুমির আমদানি করবে খামার কর্তৃপক্ষ। এ খামারে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে।দক্ষিণ এশিয়া মহাদেশের মাঝে একমাত্র বাণিজ্যিকভাবে কুমির চাষ বাংলাদেশেই শুরু হয়। আগামী ৫ বছরের মধ্যে বিশ্বে কুমিরের সবচেয়ে বড় খামার হবে এটি বলে উদ্যোক্তারা আশা করছেন। বর্তমানে বিশ্বের বৃহৎ কুমিরের খামার রয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। কতর্ৃপৰ আশা করছে, ২০১৪ সাল নাগাদ প্রতি বছর চার হাজার কুমির রপ্তানি করে তিন থেকে চার মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে। ইতিমধ্যেই ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ থেকে কুমির আমদানির প্রসত্দাব দিয়েছে। বিশ্বে পাঁচ থেকে ছয় শ’ মিলিয়ন ডলারের কুমিরের মাংসের বাজার রয়েছে। এ খামারে মূলত লোনা পানির কুমিরের চাষ করা হয়। বিশ্বে লোনা পানি কুমিরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে থাইল্যান্ড বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লোনা পানির কুমিরের চামড়া, মাংস ও হাড়ের যোগান দিচ্ছে। বিশ্বে সাত প্রজাতির কুমিরের চাষ করা হয়। এর মধ্যে লোনা পানির কুমিরই হচ্ছে সেরা। বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ২০০৪ সালের ৫ মে এ খামার প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়। উদ্যোক্তারা পরে আনত্দর্জাতিক সংস্থা ‘সিআইটিইএস’-এর অনুমোদন নিয়ে মালয়েশিয়ার সারওয়াত থেকে সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে ৭৫টি কুমির আমদানি করে। ২০০৪ সালের ২২ ডিসেম্বর কুমিরগুলো খামারে ছাড়া হয়। তখন আমদানি করা কুমিরগুলোর বয়স ছিল গড়ে ১০ থেকে ১৪ বছর। কুমিরগুলো ৭ ফুট থেকে সর্বোচ্চ ১২ ফুট লম্বা ছিল। বিশেষজ্ঞরা জানান, কুমিরের গড় আয়ু ১০০ বছর পর্যনত্দ হয়ে থাকে। আমদানি করা কুমিরের মধ্যে ১৫টি ছিল পুরম্নষ। খামারের কুমিরকে খাবার হিসেবে মাছ ও মাংস দেয়া হয়। রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেডেরে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশতাক আহম্মেদ জানান, গত জুলাই মাসে জার্মানির সঙ্গে কুমির রপ্তানির চুক্তি হয়। তারপর ৩১ আগস্ট প্রধান বন সংরৰকের কাছে কুমির রপ্তানির অনুমতি চাওয়া হয়। কিন্তু সরকারের সিদ্ধান্তহীনতায় তা বিলম্বিত হয়। এতে করে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। ভবিষ্যতে তিনি এ ধরনের ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবি জানান। তিনি জানান, আগামী মাসে ইউরোপের কয়েকটি দেশে আরো দেড় থেকে দু’শ’ কুমির রপ্তানির প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। রেপটাইলস ফার্ম সূত্রে জানা গেছে, ভালুকা হাতিবেড় গ্রামে প্রায় ১৩ একর জমির মধ্যে ৪ একর জমির মাটি কেটে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ৩২টি পুকুর তৈরি করা হয়েছে। পুকুরগুলোর তলদেশ পাকা এবং ৩ ফুট ইটের উপর ৩ ফুট কাটা তারের বেষ্টনী রয়েছে। কুমির যাতে স্বাভাবিকভাবে নিখাদ প্রাকৃতিক পরিবেশে থেকে জীবনযাপন করতে পারে সেজন্য খামারে ৪০ প্রজাতির প্রায় ৬ হাজার ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ রোপণ করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে ছোট প্রজাতির কৃত্রিম ঘাস। এর মধ্য দিয়ে খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে। গত বছর বিশ্ববাজারের প্রায় ৪০ হাজার কুমিরের চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। চীন, তাইওয়ান, জাপান, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কুমিরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, পাপুয়া নিউগিনি, ইন্দোনেশিয়া, চীনসহ প্রায় অর্ধশত দেশে বাণিজ্যিকভাবে কুমিরের চাষ হচ্ছে।
কুমির চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের উপায়-
হবিগঞ্জের ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের নানা আবিস্কার মোহাম্মদ নূর উদ্দিন ॥ হবিগঞ্জের ক্ষুদে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছে বাতাসের সাহায্যে বিদ্যুত উৎপাদন, আধুনিক পদ্ধতিতে পাটের আঁশ পৃথকীকরণের যন্ত্র, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়ার পদ্ধতি, ভয়ংকর প্রাণী কুমির চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কলাকৌশল। তাদের নানা আবিস্কার দেখে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মন্তব্য করেছেন এরাই একদিন হয়ে উঠতে পারে আইনস্টাইন, লুই পাস্তর ও জগদীশ চন্দ্র বসুর মত বিজ্ঞানী। গত ৪-৬ ফেব্র“য়ারি হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজে অনুষ্ঠিত ৩১তম জাতীয় বিজ্ঞান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সপ্তাহ ২০১০-এ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসব মজার মজার আবিস্কার করে। হবিগঞ্জের ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের এই আবিস্কারসমূহ দৈনিক খোয়াইয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে। কুমির চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কলাকৌশল ঃ কুমির একটি ভয়ংকর প্রাণী হলেও কুমির চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এমনি একটি প্রকল্প তৈরি করেছে বৃন্দাবন সরকারি কলেজের প্রাণি বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের ৬ শিক্ষার্থী। এরা হলেন রুহুল দাশ মিথুন, আব্দুল হান্নান, হেলাল মিয়া, ফারহানা আক্তর, আছমা আক্তার ও আহমদ। তারা এই প্রকল্পের মাধ্যমে কুমির চাষের ব্যাপক সফলতা অর্জন তুলে ধরেছেন। বর্তমানে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে কুমির চাষের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একটি কুমির চাষ প্রকল্প তৈরি করতে হলে প্রথম ১৫ একর জায়গা সংগ্রহ করতে হবে। এর মধ্যে ১০ একর জায়গার উপর একটি পুকুর। পাশে একটি হ্যাচারি ও একটি তথ্য কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সমগ্র এলাকার চতুর্দিকে বড় রাউন্ড থাকবে। প্রথমে কুমিরের বাচ্চা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন চীন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া থেকে সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি বাচ্চার মূল্য ৭শ’ ডলার ধরা হয়। এক সাথে প্রায় ৭০টি কুমির চাষ করা সম্ভব। কুমিরের বাচ্চা সংগ্রহ করে হ্যাচারিতে ৫% পটাসিয়াম ফরমোলেন্ট দিয়ে গোসল করানোর পর জীবানুমুক্ত করে ২৪ থেকে ৭২ ঘন্টা তাদেরকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়। এরপর পুকুরে লবন মিশিয়ে নোনা পানি তৈরি করে চাষাবাদের উপযুক্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে নোনা পানি না হলে কুমির চাষ সম্ভব নয়। কুমির চাষের সময় ১২ থেকে ১৫ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিক সার্বক্ষণিক তাদের দেখাশুনা করতে হয় এবং খাবার সরবরাহ করতে হয়। শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ চাষাবাদ। প্রতি বছরে একটি কুমির এক ফুট করে বৃদ্ধি পায়। ৩ বছর পর কুমির বাণিজ্যিকভাবে রপ্তানী করা সম্ভব। ৩ বছর পর একটি কুমির ৩০ থেকে ৩৫ কেজি ওজনের হয়। যার মূল্য প্রতি কেজি ২শ’ ডলার। একটি কুমিরের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৭ হাজার ডলার। অর্থাৎ শুরুতে একটি কুমির আমদানী করতে হয় মাত্র ৭শ’ ডলার দিয়ে। চাষাবাদের পর সেটি বিদেশে রপ্তানী করা হয় ৭ হাজার ডলারে। এছাড়া কুমির প্রকল্প দেখতে আসা দর্শনার্থীর জন্য টিকেটের ব্যবস্থা রয়েছে। একটি প্রকল্পে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হাজার হাজার দর্শনার্থী কুমির দেখার জন্য প্রকল্পে ছুটে আসেন। দর্শনার্থীর টিকেটের অংশ থেকে লাখ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। দর্শনার্থীদের জন্য পুকুরের পাড়ে একটি তথ্য কেন্দ্র চালুর ব্যবস্থা থাকবে। সেখানে কুমির ও প্রকল্প সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য একজন দর্শনার্থী সহজেই পেতে পারে। কুমির একটি মাংসাষী প্রাণী। কুমিরের প্রতিটি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ও চামড়া বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। কুমিরের দাঁত দিয়ে উন্নতমানের নেকলেস তৈরি করে বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা সম্ভব। চামড়া দিয়ে উন্নতমানের মানিব্যাগ লেদারসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হওয়া যায়। হবিগঞ্জ সরকারি বৃন্দাবন কলেজে কুমির চাষ প্রকল্পটি ছিল দর্শকদের মধ্যে আকর্ষণীয়। এ প্রকল্প উদ্ভাবনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, কুমির প্রকল্প বেকারত্ব দূরীকরণে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক চাঙ্গাকে শক্তিশালী করবে। তারা সিলেট অঞ্চলের প্রবাসীদের কুমির চাষ প্রকল্প গ্রহণের জন্য আহবান জানান।
No comments:
Post a Comment